পিছুটান

হারিয়ে যাবার ইচ্ছে করলেই হারিয়ে যাওয়া যায় না। আমাদের পেছনে অনেক ইনভিসিবল সুতো থাকে। যাতে আমাদের জীবনটা পুরোটাই অতীতের সাথে সংযুক্ত। কতবার ভেবেছি সব ছেড়েছুড়ে চলে যাব একদিকে কিন্তু পরিবার, আত্মীয়-স্বজন আর শুভাকাঙ্খীদের কথা চিন্তা করে আর যাওয়া হয়নি।

পিছুটান এমনই। লিকুইড অক্সিজেনের মতো। লিকুইড আপনাকে বাঁচতে দিচ্ছে না আর অক্সিজেন মরতে। আমি বাঁচতেও পারছি না আর ভাসতেও পারছি না। মাঝখানে লটকে আছি।

ছোটবেলায় রাগ করে নানুবাড়ি যাওয়া ধরতাম। কদ্দুর যেতাম জানেন? বাড়ির পাশের খালের ওপাড় পর্যন্ত। তারপরেই আমাকে ফিরিয়ে আনা হতো আশেপাশের লোকদের সাহায্যে। আর এখন বাড়ির থেকে পাঁচশ কিলোমিটার দূরে থাকি। তবু কেউ একবারের জন্য আমাকে নিতে আসে না। আমি হারিয়ে যাবো সেই ভয়টা যেন তাদের ভেতরে আর নেই।

কেন নেই? কারণ, তারা বুঝেছে এখন আমার মস্তিষ্ক পরিপক্ব। আমি কখনো তাদের ধোঁকা দিবোনা সেটা তারা বুঝে ফেলেছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব, সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ভবিষ্যতে তাদের সুখে রাখার সেটা যেন তারা দৈবভাবে খবর পেয়েছে! কতটা বিশ্বাস আমার ওপরে তাদের!

আমি তাই হারাতে পারি না। পারি না তাদের বিশ্বাসের গোড়ায় কুঠারাঘাত করতে। এতোটা বিশ্বাস আর এতোটা চাওয়া-পাওয়ার ভেতরেই পরিবার বেঁচে থাকে। আমরা বাঁচিয়ে রাখি। পাশ্চাত্যের মতো আমাদের বাবা মা কখনোই নিজেরা ভাল থাকার জন্য আমাদের ব্যাবিসিটারের হাতে তুলে দেয়নি। আর সেটাই আমাদের সবচে বড় পিছুটান।

কেউ একজন বলেছিলেন,
"চলে যেতে চাও? ঠিক আছে...পিছুটানগুলো রেখে যেও না। ভাল থাকতে পারবে না।"
আমিও তাই চলে যেতে পারি না। কারণ পিছুটান ছাড়াতে পারি না, আমি ভাল থাকতে চাই।
অতীতেই আমার ভালবাসা, অতীতেই আমার ভাল থাকা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তর্ক বিতর্ক

ফুলশয্যা

“শোকীয় ভ্রমণ”