কান্না ঢাকা বৃষ্টি

সেদিন বৃষ্টি ছিল।
অঝোর ধারা বললে তাকে কমই বলা হবে। সারা শহর যেন তলিয়ে যাবে মনে হচ্ছিল।

রুমমেট কোথায় ছিল ঠিক মনে করতে পারছি না। রুমে ছিলনা অবশ্যই। আমি জানালার গ্রিল ধরে ড্রেন উপচে রাস্তা তলিয়ে যাবার দৃশ্য দেখছিলাম।

ছোটবেলায় একবার বন্ধুদের পাল্লায় পরে সাতার কাঁটা না জানা সত্ত্বেও পানিতে ঝাঁপ দিয়ে একবার মরার উপক্রম হয়েছিল। বিশখালি নদী সংযুক্ত খাল। ওবারই প্রথম (শেষ নয়) কাদা পানির স্বাদ পেয়েছিলাম। কেমন যেন তিতা তিতা। তখন আমার যেরকম ডুবোডুবো অবস্থা হয়েছিল রাস্তার অবস্থাটাও সেরকম মনে হচ্ছিল।

যেন ডুবে না যেতে তার প্রচন্ড করুণ আকুতি। তবে সবাই সে আকুতি শুনতে পায় না। আমি কেন পেয়েছিলাম সেটা রহস্য।

স্বভাবতই আমারও আকুতিভরে কান্না করতে ইচ্ছে করল। আর তার সাথে বৃষ্টিতে ভেজাটা মিস করা উচিত হবেনা ভাবলাম।

সচরাচর আমি বৃষ্টির পানিতে ভিজি না। প্রাইমারি স্কুল লাইফে অনেক ভিজেছি। যার ফলাফল নিয়মিত সালবুটামল ও সেটিরিজিনে এসে ঠেকেছে।

তারপরেও এত প্রচন্ড বৃষ্টি আর বজ্রপাত কাছ থেকে উপভোগ করার ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না।

ষাট টাকার তোয়ালে কোমরে বেঁধে এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম।
এত বড় বৃষ্টির ফোটা পড়ছিল যেন গালে মোটা মোটা আঙুল দিয়ে কেউ জেনেশুনে চিমটি মারছে মনে হচ্ছিল।
বড় বড় বজ্রপাত মেঘের অন্ধকার কাটিয়ে সারা শহরে টিউব লাইটের আলো দিচ্ছিল।

সেবারই আমি এত কাঁদলাম। কাঁদার জন্য ওর থেকে ভাল সময় আর কখনোই হত না। সারা আকাশ কাঁদছিল মেঘের বর্ষনে, সমস্ত শহর কাঁদছিল তলিয়ে যেতে যেতে, অপ্রতুল গাছগুলো কাঁদছিল বিলীন হবার ভয়ে।

আর আমি কাঁদছিলাম-
থাক, কিছু রহস্য থাকুক না।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তর্ক বিতর্ক

মাঝরাত, মুয়াজ হোসেন