বিসর্জন

♠♠♠বিসর্জন♠♠♠
             -মুয়াজ হোসেন

"হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ভাইয়া।"
একমাত্র বার্থডে মেসেজটা দেখে কিছুটা হলেও মন খারাপের ভাবটা কমল রাকিবের। এটা ওর আঠারোতম জন্মদিন। অবশ্য এদিনই ওর সঠিক জন্ম তারিখ কিনা সেটা ওর মাও বলতে পারে না। কারনটা আলসেমী। যেটিকে ওর মা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে বেখেয়ালী। ঠিক কতটা অলস কিংবা বেখেয়াল হলে সন্তানের জন্ম তারিখটাও মনে রাখা হয়না?
অমাবস্যার রাতে অন্ধকারকে আরো গভীর করে ওর জন্ম। হারিকেনের আলোয় ওর চেহারা সকলকেই হতাশ করে দিয়েছিল।
"বাপের মতন কুচকুচিয়া কালা হইছে। মায়ের কোন কিছুই পোলার লগে মিলবনা।"
মুখ বাঁকা করে বলেছিল ওর বড় খালা। এরকম হতাশান্বিত পরিস্থিতিতে কে আবার জন্ম তারিখ লিখতে যাবে!
তবে যেহেতু প্রত্যেকেরই একটা জন্মতারিখ থাকতে হয় তাই রাকিব নিজেই নিজের জন্মতারিখ বানিয়ে ফেলল।
"জন্মতারিখ নিজের বানানো, তাতে আবার পার্টিও?" ওর বন্ধুর পার্টি করার ব্যাপারে বলেছিল ও। তবে গতবছর যাবৎ ওকে একজন লোক বিভিন্ন দিবসে নিয়মিত মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। রাকিবের খালাত বোনের বান্ধবী মাহিম। খালা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরিচয়। ওর ধারনা মেয়েটা অনেক মিশুক তাই মনে করে। অন্য কোন কারন নেই। যদিও ব্যাপারটা রাকিব ওর বন্ধু জাহিদকে বলাতেই সে উচ্ছসিত গলায় বলল,
"মামুর বেটা! কাহিনী তো ঘটছে। মাইয়া তোর প্রেমে পরছে।"
ও ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, "কচু পড়ছে। দুই চারটা এসএমএস দিলেই প্রেম হয় না।"
"তুই এখনো বোকাই থাইকা গেলি।" বিরক্তির সুরে জাহিদের প্রস্থান।
তবে জাহিদ যাই বলুক আর মাহিমের রাকিবের প্রতি দুর্বলতা থাকুক বা নাই থাকুক রাকিবের কাছে ব্যাপারটা ভালই লাগে। কারন ওর ধারনা ওর মত ছেলের দ্বারা এটাই অনেক কিছু। অন্তত একটি মেয়ে তো মনে করে!
তবে জাহিদ এখন পর্যন্ত কতগুলো প্রেম করেছে তা আল্লাহ আর জাহিদ জানে। জাহিদ রাকিবের চেয়ে বয়সেও কিছুটা বড়। তাই বাস্তবিক জ্ঞানটাও বেশি। জাহিদ আর রাকিব গত তিন বছর যাবৎ একসাথেই আছে। দুজনের মধ্যে গলায় গলায় খাতির। আর সেই খাতির রক্ষা করতে গিয়েই রাকিবকে এত বড় বিসর্জন দিতে হবে তা কে জানতো?

গতকালই কলেজ থেকে গরমের ছুটি দেয়া হল। পরীক্ষা পরবর্তী রিলাক্সেশনও একই সাথে সারার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল কলেজ থেকে। তো, জাহিদ হঠাৎ করে বলে উঠল,
"চল তোরা দু'দিন আমাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসবি।"
রাকিব ও ওর আরেক বন্ধু জিয়াকে উদ্দেশ্য করে।
রাকিবের যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও জাহিদের কথা ও ফেলতে পারল না। বাড়িতে মাকে বলে দিল যে আসতে দেরি হবে।
যদিও ওর মা অনেক খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল যে ও কেন বাড়িতে আসতে দেরী হবে তবুও ও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ধরা খেতে খেতে শিক্ষা সফরের বাহানা দিয়ে মাকে শান্ত করল।
"শিক্ষা সফর না কচু!" বলল ওর আরেক বন্ধু জিয়া।
"সমস্যা নাই। অনেক কিছুই শিখতে পারবি। আমাদার এলাকার শিক্ষার হার পুরো বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।" বলে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকল জাহিদ। আর জিয়াও বরাবরের মত ওর সঙ্গ দিতে থাকল।
"হ তোমরা তো বাংলাদেশের বাইরে থাকো।" জবাবে বিরক্তি ঝরে পড়ল রাকিবের। তবে জিয়া আর জাহিদের হাসির আগুনে ঘি ঢেলে দিল।

ঘন্টা দুইয়ের বাস ভ্রমণের পরে ওরা জাহিদদের বাড়ির রাস্তায় এসে নামল। জাহিদ আর জিয়া সমবয়সী হওয়াতে ওদের আলোচনার অনেক বিষয়ই রাকিব এড়িয়ে যায়। মুলতঃ ওরাই চায়না রাকিব কাবাব মে হাড্ডি হোক।
নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও জাহিদকে জিজ্ঞেস করল রাকিব
"তোর বাড়ি আর কদ্দুর রে?"
"দুই মিনিট হাঁট। শরীরের ব্যায়াম হবে।" বলেই আবার সেই বিরক্তিকর হাসি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে জিয়াও তার দাঁতের মহড়া দেখিয়ে সঙ্গ  দিতে থাকল।
"আকাশে মেঘ। রোদ নাই। দাঁত শুকাবার বৃথা চেষ্টা করিস না।" ওদের সাথে হাঁটা শুরু করে গজগজ করতে করতে বলল রাকিব। হয়ত ওরা শুনতে পায়নি তাই এবার কোন জবাব এলোনা।
ওদেরকে এগিয়ে যেতে দিয়ে ফলো করতে থাকল আর আশপাশ দেখতে লাগল রাকিব। গ্রামাঞ্চলে যা দেখা যায় সবই সুন্দর। কবি-সাহিত্যিকরা শুধু শুধু গ্রামের প্রেমে পরেনি। তবে শহরে না গেলে গ্রামের রূপ চোখে পড়ে না। রাকিব মনে মনে ভাবতে লাগল, কি হত যদি আমি শহরে পড়তে না যেতাম। গ্রামের কৃষকদের মত চাষবাস করে খেতাম আর দিন শেষে ঘরে ফিরেই ঘুম। আমাদের জীবনের কোন ক্ষুদ্র ব্যাপারও যদি পরিবর্তিত হয়ে যায় তাতেই পুরো জীবনটা উল্টে যাবে।"
"কিরে কই যাস!! ঐদিকে হিন্দু বাড়ি। আমাদের বাড়ি এইটা।"
জাহিদের ডাকে চিন্তায় ছেদ পড়ল রাকিবের। একটু বোকামির হাসি হেসে ওদের সাথে ঢুকল বাড়ির ভেতর। ঘরে ঢুকে পরিচয় পর্বের পর কাপড়চোপড় পাল্টে খাওয়া-দাওয়া সারল ওরা। খাওয়া শেষে জাহিদ ওকে জিজ্ঞেস করল ওদের সাথে বেরোবে কিনা। যেহেতু রাকিব  না গেলেই ওদের ভাল হয় তাই ও না যাওয়ার মতই দিল। ওরা বেরোলে রাকিব বিশ্রামের জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ল।

"এইযে ভাইয়া। এইযে ভাইয়ার বন্ধু ভাইয়া। সন্ধ্যা হয়ে গেছে  আর কত ঘুমোবেন?" ছোট ছোট ডাকে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই উঠে বসল রাকিব। চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দৃষ্টি স্থির হল একটি মেয়ের ওপর। মুহুর্ত পরে বুঝতে পারল যে ও জাহিদদের বাড়িতে আছে এবং মেয়েটি সম্ভবত জাহিদের ছোট বোন তুলি। জাহিদের মুখে নামটা শুনেছিল ও। জাহিদদের ঘরে বিদ্যুৎ নেই। তবে সৌরবিদ্যুতের মৃদু আলোতে তুলিকে যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা জলপরীর মত লাগছে। পার্থক্য একটাই ; জলপরীদের নাকি লেজ থাকে কিন্তু তুলির সেটার বদলে পা আছে। রাকিবকে একদৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুলির কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও পরক্ষণে সামলে নিয়ে বলল, "ভাইয়া কি অসুস্থ? "
তুলির প্রশ্নে সম্বিত ফিরে পেয়ে রাকিবের চেহারাটা আরো বোকা বোকা হয়ে গেল। তবুও তুলির অস্বস্তি জ্ঞাপক প্রশ্নের উত্তরে আমতা আমতা করে বলল, "আ-না, না। আমি ঠিক আছি। জাহিদ-জিয়া, ওরা কোথায়? "
"তারা তো সেই দুপুরবেলা বেরোলেন। এখনো ফেরেন নি।
আপনি উঠে পরুন। হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা খান।"
"রাকিব। আমার নাম।
হ্যাঁ, যাচ্ছি।"
"আমি জানি। ভাইয়া বলেছিল।"
"তাহলে তখন আমাকে 'ভাইয়ার বন্ধু ভাইয়া' বলে ডাকলে কেন?"
"হি হি হি, এম্নিই।" খিলখিল করে হাসতে হাসতে ঘরের ভেতর চলে গেল তুলি। আর পেছনে ফেলে গেল রাকিবের বোকা বোকা চেহারার ফ্যালফ্যালে চাহনি।

♦প্রায় আধাঘন্টা পরে জাহিদ ও জিয়া বাড়িতে আসল। এসে দেখে রাকিব জাহিদের একটি পুরনো সাপ্তাহিক ওল্টাচ্ছে। ওদের দেখে রাকিবের মেজাজটা বিগড়োতে শুরু করল।
"সালারা, নিজেরা ঘুরে আসল। আমাকে নিয়া গেলে সমস্যা কি ছিল?"
মনে মনে গালাগাল দিল ওদের। আর মুখে বলল,
"কোথায় গেছিলি?"
"এই একটু কাজে গেছিলাম। বোঝ না, এলাকায় আসলেই পুরা ব্যস্ত হয়ে যাই।"
টিটকারি মারল জাহিদ। আর সাথে জিয়ার খোলামুখো হাসি তো আছেই।
"সমাজসেবায় নামছ নাকি?" পাল্টা প্রশ্ন রাকিবের।
"কত সেবা আছে! তুই বুঝবি না। বাচ্চা মানুষ।" পুনরায় খোঁচা মারল জাহিদ।
"কি আমার বুইড়া রে!" রাগে গজগজ করতে করতে বলল রাকিব।
শেষোক্ত কথার জবাব না দিয়ে জাহিদ জিজ্ঞেস করল ওকে -"এখন খাবি? আমাদের একটু বেরোতে হবে।"
বেরোনোর প্লানটা ওকে বাদেই করা হয়েছে বুঝে নিয়ে রাকিব বলল - "না, আমি পরে খেয়ে নেব। তোরা খা।"
যেন এই উত্তরটিই মনে মনে আশা করেছিল জাহিদ। তাই বলল, "ঠিক আছে। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস। আমাদের ফিরতে দেরি হবে।"
পত্রিকার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে মাথা নেড়ে সায় জানাল রাকিব।
মিনিট বিশেকের মধ্যেই জাহিদ ও জিয়া বেরোল ওদের সেবামূলক(!) কাজকর্ম করতে। আর রাকিব পত্রিকা রেখে একটু মোবাইল টিপিটিপি করা শুরু করল এমতাবস্থায় তুলি এসে হাজির। এসেই জিজ্ঞেস করল-
"ভাইয়া কি এখন খাবেন?"
"এই একটু আগেই না খেলাম। কিছুক্ষণ পরে খাই।"
"নাস্তা খেলেন তাতেই হয়ে গেল?"
"আমি এমনিতেও বেশি খাইনা।"
"সেজন্যেই তো শরীরের এই হাল।"
"হুমম।"
দুজনেই কিছুক্ষণ নীরব থাকল। রাকিব তুলির সাথে চোখাচোখি হতেই আবার মোবাইল টিপায় মন দিল। অবশেষে তুলি আবারো শুরু করল,
"কি! গার্লফ্রেন্ডের সাথে চ্যাট করছেন নাকি?"
"হ্যাঁ।"
"কি করে সে?"
"কি করে তাতো জানিনা।"
"ওমা! এ আবার কেমন কথা? গার্লফ্রেন্ড কি করে তাও জানেন না?"
"জানবো কি করে? তাকে তো চিনিই না!"
"ফাজলামো করছেন তাই না!"
"হ্যাঁ। আসলে আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। আমার মত কালো, চিকনা ছেলের সাথে পেত্নীও প্রেম করবে না।"
"প্রেম করতে চেহারার না বুদ্ধির দরকার হয়।"
"আচ্ছা তাই! তাহলে আমার ওটাও নেই।"
"নেই বললেই তো আর হয় না।"
"কি করব আমার কাছেও কাউকে কখনো ভাল লাগানি আর আমাকেও কারো ভাল লাগেনি।
আচ্ছা, আঙ্কেল-আন্টিকে তো দেখছি না। কোথায় তারা?"
"পাশের গ্রামে আমার খালা বাড়িতে গেছে। খালার শ্বাশুড়ি অসুস্থ তো তাই।"
"ও, তুমি যাওনি?"
"যাইনি তাতো দেখছেনই। আর সবাই চলে গেলে মেহমানদারী করবে কে?"
"তাও ঠিক।"
"ভাইয়া, আপনার ফোনটা একটু দিন তো।"
" হ্যাঁ, এই নাও।" রাকিবের ফোনটা হাতে নিয়ে তুলি ঘরের ভেতর চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে এসে ফোনটা দিয়ে গেল।

মিনিট দশেক পরে তুলি রাকিবের জন্য খাবার নিয়ে এল। রাকিব খাওয়া শুরু করতে দেখে তুলি জাহিদের পড়ার টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে তাই রাকিব বলল তুলিকে,
"তুমিও খাও। বাসায় তো কেউ নেই। একা একা খেতে ভাললাগবেনা।"
তুলি যেন এই কথারই অপেক্ষা করছিল। তাই দ্রুত পায়ে আরেকটা প্লেট নিয়ে এসে খেতে বসল।

খাওয়া শেষ করে তুলি জিনিসপত্র নিয়ে ঘরের ভেতর গেল আর রাকিব শুয়ে শুয়ে একটু ফেসবুকে ঢুঁ মারল।
"কিছুই নেই। সব আজাইরা পোলাপাইনের কাজকাম। যারা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো ছাড়া আর কিছু বোঝেনা।"
মনে মনে গালাগাল দিতে লাগল ও। ফেসবুকও যখন বিরক্তিকর মনে হল তখন ঘুমোনো ছাড়া আর কোন উপায় দেখল না ও। সবে রাত ৯:০০টা। এত তাড়াতাড়ি কখনোই ঘুমানোর অভ্যেস নেই ওর। তবুও কি আর করার। মোবাইলটা রেখে চোখ বন্ধের চেষ্টা করল।
একটু ঘুমঘুম ভাব ধরেছিল এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল ওর।
উঠিয়ে দেখে এসএমএস। নাম্বার অচেনা। লেখা,
"রাত তো গভীর হল।
আজ তো আর ঘুম হবেনা
তাকিয়ে থাকব তোমার দিকে
তুমি কি বল?"
এত রোমান্টিক এসএমএস দেয়ার কোন লোক ওর নেই। তাই কল দিল নাম্বারটিতে।
রিং হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল করল রিংটোনের আওয়াজ জাহিদদের ঘরের ভিতর থেকে আসছে।
"তার মানে তুলি! না, না। এ অসম্ভব। জাহিদের বোন ও। আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিসর্জন দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।"
মনে মনে চিন্তা করতে করতে ডাক দিল ও তুলিকে।
"তুলি, এই তুলি। এপাশে আস তো একটু।"
ওপাশ থেকে কোন জবাব এল। কিছুসময় পরে তুলি রাকিবের  ঘরে এল।
ওকে আসতে দেখেই রাকিব উঠে বসল।
"তুমি কি এইমাত্র এসএমএস দিয়েছ?" জিজ্ঞেস করল ও তুলিকে।
"হ্যাঁ। দিয়েছি। তো?"
"না না। আর কখনো এরকম এসএমএস দিবা না।"
"কেন দিবনা? একশবার দিব। আপনার কি তাতে? টাকা তো আমার যাবে।" অনেকটা রেগেমেগেই উত্তরটা দিল তুলি।
"রাগ করছ কেন? দেখ তুমি আমার বন্ধুর বোন। তোমার সাথে আমার এসব করা উচিত হবে না।"
রাকিব বোঝানোর চেষ্টা করল তুলিকে। কিন্তু তুলি নাছোড়বান্দা। সে বলল,
"আপনার বন্ধুর বোন। আপনারও কি বোন?"
"আপন না হলেও বোনের মতন তো!"
"আপন তো না! তাহলে সমস্যাটা কোথায়? "
"আছে সমস্যা আছে। তুমি কি চাও তোমার কারনে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হোক?"
"আমি অতশত বুঝিনা। বুঝতে চাইও না।"
বলে রেগে হনহন করে ঘরের ভেতর চলে গেল তুলি। আর রাকিব বিছানার ওপর মাথার ভেতর হাজারটা চিন্তা নিয়ে নিষ্পলক তাকিয়ে রইল তুলির যাওয়ার পথের দিকে। এটা কিভাবে সম্ভব? কোন সমীকরণ মেলাতে পারছে না ও। আসলে এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে ওর।

সমীকরণ মিলেছিল অবশেষে। জাহিদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের কাছে হেরে গিয়েছিল তুলির ভালবাসা।
আজ তুলির বিয়ে। দ্বিতীয়বারের মত জাহিদের বাড়ি যাচ্ছে রাকিব। মাঝে কিছুদিন জাহিদের সাথে যোগাযোগও করেনি ও। নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা আরকি।
তুলি বহু কান্নাকাটি করেছিল। করাটাই স্বাভাবিক। প্রথম প্রেম বলে কথা। আর রাকিব?
ও কেন কাঁদবে?
ও তো স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিয়েছিল ভালবাসাকে।
এটা ঠিক যে ভাল ও বেসেছিল।
কিন্তু সেই ভালবাসা নীরবে গলাটিপে হত্যা করেছিল আর তার জন্মস্থানেই ফেলে রেখে এসেছিল।

তুলিকে বরযাত্রীরা নিয়ে যাচ্ছে। জাহিদের মা অনেক ব্যস্ততার মাঝেও খেয়াল করছে রাকিবকে। কি কারনে যেন রাকিব ওর চোখের পানি আটকে রাখতে পারছে না।
"দেখছিস, ছেলেটা কিরকম কাঁদছে? আর তুই? হ্যাংলার মত খাচ্ছিস আর দাঁত বের করছিস।" জাহিদের মা বলল জাহিদকে।
"ওর বোন নেই তো। তাই আরকি!"
জাহিদের দাঁত কেলানো জবাব।
ওদিকে রাকিব ভাবছে--
"তুলি কি সত্যিই চলে যাচ্ছে?"
"হ্যাঁ।  এখন আর ফেরানো যাবেনা। আর ফেরাবোই বা কেন? আমিই তো বিসর্জন দিয়েছি আমার আর তুলির ভালবাসা, বন্ধুত্বের খাতিরে।"
জাহিদের দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজের প্রশ্নের জবাব দিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তর্ক বিতর্ক

ফুলশয্যা

“শোকীয় ভ্রমণ”